responsive_medium_BIqbg8PA15j_yitNHonFhDGcVFnIEc_NJi4EWA6DbxQ

World VS Corona Virus

  • by PencilBox Training Institute
  • 17-01-2024 17:10pm
  • 0 Comments

"করোনাভাইরাস" নামটি ল্যাটিন শব্দ করোনায় থেকে এসেছে, যার অর্থ "মুকুট" বা "পুষ্পস্তবক"। কি অদ্ভুত তাই না? নাম এর সাথে কাজের কোন মিল নেই। আসলে এই নামটি রাখা হয়েছে এই ভাইরাসটির আকৃতির জন্য। মানব করোনভাইরাস প্রথম আবিষ্কার করা হয়েছিল ১৯৬০ এর দশকের শেষের দিকে। করোনাভাইরাস হলো বৃহত প্লোমোর্ফিক গোলাকার কণা (ভাইরাসের কণার ব্যাসটি প্রায় ১২০ এনএম) ইলেক্ট্রন মাইক্রোগ্রাফগুলিতে ভাইরাসের খামটি ইলেক্ট্রন ঘন শেলগুলির একটি পৃথক জোড়া হিসাবে উপস্থিত হয়। বর্তমানে এই ভাইরাস মহামারী আকার ধারণ করছে। 
করোনাভাইরাস এমন একটি সংক্রামক ভাইরাস - যা এর আগে কখনো মানুষের মধ্যে ছড়ায় নি। ভাইরাসটি কোন একটা প্রাণী থেকে মানুষের দেহে ঢুকেছে এবং একজন থেকে আরেকজনের দেহে ছড়াতে ছড়াতে আবার নিজের জিনগত গঠনে সবসময় পরিবর্তন আনছে - যাকে বলে মিউটেশন। ভাইরাসটির আরেক নাম ২০১৯-এনসিওভি। এটি এক ধরণের করোনাভাইরাস। করোনাভাইরাসের অনেক রকম প্রজাতি আছে, কিন্তু এর মধ্যে মাত্র ৭টি মানুষের দেহে সংক্রমিত হতে পারে।

করোনাভাইরাস সংক্রমণের প্রধান লক্ষণ হলো, শ্বাস নিতে কষ্ট হওয়া, জ্বর এবং কাশি। কিন্তু এর পরিণামে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া, নিউমোনিয়া এবং মৃত্যু ঘটতে পারে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, ভাইরাসটি শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে প্রায় পাঁচ দিন লাগে। প্রথম লক্ষণ হচ্ছে জ্বর। তার পর দেখা দেয় শুকনো কাশি। এক সপ্তাহের মধ্যে দেখা দেয় শ্বাসকষ্ট এবং তখন কোন কোন রোগীকে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়।

মধ্য চীনের উহান শহর থেকে এই রোগের সূচনা। ৩১শে ডিসেম্বর এই শহরে নিউমোনিয়ার মতো একটি রোগ ছড়াতে দেখে প্রথম চীনের কর্তৃপক্ষ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে সতর্ক করে। এর পর ১১ই জানুয়ারি প্রথম একজনের মৃত্যু হয়।

আস্তে আস্তে এই ভাইরাস এখন পুরো পৃথিবীতে ছড়িয়ে যাচ্ছে, যেখানে প্রতিদিন আক্রান্ত হচ্ছে হাজার হাজার মানুষ, মৃত্যুবরণ করছে শতাধিক। বিষয়টা মোটেই হালকা ভাবে নেবার মতো না। আমাদের মতো দেশের জন্য এটা শুধু মহামারীই না বরং অভিশাপ হয়ে দাঁড়াবে। যেখানে এই উন্নত দেশগুলোই হিমশিম খাচ্ছে সেখানে আমরা তো "সচেতনতা" কি সেটাই বুঝি না। পুরো পৃথিবী আজ বার বার বলছে সামাজিক দূরত বজায় রাখতে, সেখানে আমাদের জনগণ নির্বাচন, বিয়ের উৎসব, ঘুরতে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। কথাগুলো দেখে খারাপ লাগতে পারে কিন্তু সত্যি কথাটা কি জানেন? নিজের দেশকে, দেশের সরকারকে,আইনকে, চিকিৎসা ব্যবস্থাকে, অফিসের বসকে আপনি যত ইচ্ছে বলতে পারেন কেন এই গরিব দেশে জন্ম নিলাম, সরকার কেন লকডাইন করছে না, আইন এ ব্যাপারে কেন কঠোর হচ্ছে না, এই চিকিৎসা ব্যবস্থাতে আমি বাঁচবো না, অফিস কেন বন্ধ দিচ্ছে না, কিন্তু বিশ্বাস করেন এই করোনাভাইরাসটির জন্য আপনি শুধু মাত্র আপনিই দায়ী হতে পারেন। হ্যাঁ, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আগে নিজেকে সচেতন থাকতে বলেছে। যেহেতু ভাইরাসটি সংক্রামক তাই নিজেকে আগে এই ভাইরাস থেকে নিরাপদ রাখতে হবে। যার জন্য দরকার "সামাজিক দূরত"।  

 

সামাজিক দূরত্ব কী?
যানবাহনের পেছনে আমরা প্রায়ই একটা বাক্য লেখা থাকতে দেখি, ‘১০০ হাত দূরে থাকুন’। মাঝেমধ্যে আমরা রাগের বশেই হোক বা মজা করে হোক, একে অন্যকে বলি, ‘দূরে গিয়া মর!’ এসবের মূলকথাই হলো ‘দূরত্ব বজায় রাখুন’।
হ্যাঁ, দূরত্ব বজায় রাখুন। সামাজিক দূরত্ব মেনে চলুন। সামাজিক দূরত্ব হলো কিছু নীতিমালা, যেগুলো সংক্রামক বা ছোঁয়াচে রোগের দ্রুত ছড়িয়ে পড়া রোধ করে। এ ক্ষেত্রে পরস্পরের মধ্যে ছয় ফুট বা প্রায় দুই মিটারের ব্যবধান বজায় রাখতে হয়। সেই ১৯১৮ সালে যখন ‘স্প্যানিশ ফ্লু’ মহামারি আকার ধারণ করে, তখন এবং তার প্রায় এক শ বছর পর ২০১৪ সালে ইবোলা ভাইরাসের ছড়িয়ে পড়া ও সংক্রমণ রোধে ‘social distancing’। অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। ষাটের দশকে যখন ‘এসিয়ান ফ্লু’ মারাত্মক আকার ধারণ করে, তখন সামাজিক দূরত্বই এর সংক্রমণ হার ৯০ শতাংশ থেকে ৫০ শতাংশে কমিয়ে নিয়ে আসে। অতিসম্প্রতি বিশ্বজুড়ে মহামারি আকার ধারণ করা কোভিড–১৯–এর ব্যাপক হারে ছড়িয়ে পড়া রোধেও ইতিমধ্যেই ‘Social Distancing’ ভূমিকা রাখতে শুরু করেছে। প্রতিটি আপদই আমাদের পরবর্তী সময়ে আরও ভালো ও সুস্থভাবে বেঁচে থাকার জন্য কিছু না কিছু শিখিয়ে যায়। করোনা হয়তো আমাদের মানবসভ্যতার বেশ ক্ষতি করবে। কিন্তু এটা আমাদের শিখিয়ে যাক নিরাপদ দূরত্ব বা সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার অভ্যাস যেন আমরা পরবর্তী সময়ে ছোটখাটো অনেক বায়ুবাহিত বা ভাইরাস ঘটিত রোগবালাই থেকে মুক্ত থাকতে পারি।

কীভাবে প্রতিরোধ করবো? 

•   খুব সাধারণ কিছু নিয়ম মানলেই এড়ানো যাবে এই সংক্রমণ 

•   রোগী কাছ থেকে আসার পর ভালো করে হাত ধুতে হবে। নাক-মুখ ঢেকে হাঁচি-কাশি দিন  

•    ডিম, মাংস ভালো করে রান্না করুন

•    রোগীর থেকে দূরে থাকুন

•    নিয়মিত হাত ধুয়ে রাখুন।

করোনা ভাইরাসের লক্ষণ দেখা দিলে অবহেলা না করে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।

আজ পুরো বিশ্ব, বিশ্বের মানুষ একদিকে আর করোনাভাইরাস একদিকে। আপনার আমার একটু সচেতনতাই পারে এই গোগ্রাসী ভাইরাস থেকে বিশ্বকে বাঁচাতে।

সর্বশেষে একটি কথা না বললেই নয়, চিকিৎসাবিজ্ঞানও যেখানে আশার আলো খুঁজে পায় না, সেখানে অনেক বড় বড় চিকিৎসক-গবেষকও দুটি উপদেশ দেন, ‘ধর্মীয় অনুশাসন মেনে চলুন এবং নিয়মতান্ত্রিক জীবন যাপন করুন।’

All Comments